বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের বিয়ানীবাজারের লাউতায় এক নির্মাণ শ্রমিককে জবাই করে হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। মেয়ের সঙ্গে প্রেম করতে বাধা দেয়ায় প্রেমিকার বাবা নজরুল ইসলামকে গলা কেটে হত্যা করেন আব্দুল মুবিন লিমন (২২) নামের এক যুবক।
গ্রেফতার হওয়ার পর বখাটে লিমন পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য জানায়। সোমবার বিকেলে থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের দাবি করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার থানা) সুদীপ্ত রায় বলেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লাঠি ও ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনী শংকর কর জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের নন্দিরফল এলাকায় একটি তাল গাছের নিচে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের মুহিব আলীর ছেলে আব্দুল মুবিন লিমনকে তার নিজ ঘর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ওসি অবনী শংকর কর জানান, রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত রয়েছে কীনা তা জানার চেষ্টা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ওসি আরও জানান, মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে লিমনকে সনাক্ত করা হয়। পরে লাউতা ইউনিয়নের টিকরপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর তার ঘর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কাঠের লাঠি ও ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে লিমন জানিয়েছে, নিহত নজরুল ইসলামের বড় মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
মেয়েটি ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ধীরে ধীরে তা গভীর থেকে গভীরতর হয়। এক পর্যায়ে তারা দুজনে এক সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় গোপনে ঘুরে বেড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হতো, এমনকি রাতের আঁধারে মেয়ের ঘরের বাইরে দুজনে একান্তে দেখা সাক্ষাৎ করতো। এ অবস্থায় গত আগস্টে বিষয়টি মেয়ের পরিবারে জানাজানি হয়ে যায়।
এতে মেয়ের পরিবারের নিষেধের কারণে তাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলা এবং দেখা করতে না পেরে ব্যাকুল হয়ে উঠে লিমন। মেয়েটির ফোন বন্ধ থাকায় তার বাবা-মায়ের ফোনেও কল দিত। এ নিয়ে নজরুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে বাকবিতণ্ডা হতো লিমনের। এতে করে নজরুল ইসলামের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সে। আক্রোশে কিছুদিন পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা করে প্রেমিকার বাবাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দিন ঘর থেকে কাঠের তৈরি লাঠি ও চাকু ঘটনাস্থলের পাশে লুকিয়ে রাখে সে। পরে নির্মাণ শ্রমিকদের ঠিকাদার নজরুল ইসলামকে ঘর নির্মাণের কাজ দেয়ার কথা বলে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে আনেন। অস্ত্রগুলো গোপণে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নজরুলের সঙ্গে হেঁটে আসছিল লিমন। ঘটনাস্থলে আসার পর প্রথমে পেছন থেকে নজরুলের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে সে। পরে মাথার সামনে পুনরায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। লাঠির আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায় নজরুল। এ সময় সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় লিমন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে লিমন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে একা জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে। তবে লাশের প্রাথমিক সুরতহাল ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে সচেতন মহলের ধারণা।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার থানা) সুদীপ্ত রায়, বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের ওসি অবনী শংকর কর ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।